সন্তানের উন্নত জীবন চান?—তাহলে বিদেশে না পাঠিয়ে
সন্তানকে দেশে থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করুন। কারণ, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ মানুষই
এখন উন্নত জীবনের জন্য বিদেশের পরিবর্তে সন্তানকে দেশে থাকতে বলবেন। কারণ,
তাঁরা মনে করেন, পরবর্তী প্রজন্ম তাঁদের চেয়েও ভালো থাকবে এবং দেশেই ভালো
থাকার সুযোগ অনেক বেশি।বাংলাদেশে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে যাঁরা উদ্বিগ্ন, তাঁদের জন্য খবরটি অবশ্যই আশা-জাগানিয়া।
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক আন্তর্জাতিক
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিউ রিসার্চের ‘বিশ্ব মনোভাব’ শীর্ষক এক জরিপ থেকে এ
তথ্য পাওয়া গেছে। ৯ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে এ জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা
হয়। জরিপে আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিশ্বের উন্নত বা ধনী দেশগুলোর
চেয়ে উদীয়মান ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে অনেক বেশি আশাবাদী হিসেবে উল্লেখ
করা হয়েছে। জরিপ বিশ্লেষণ করে পিউ রিসার্চ বলছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে
যেসব দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বেশি, সেসব দেশের নাগরিকেরা তত বেশি
আশাবাদী। তাঁরা আরও মনে করেন, ভালো শিক্ষা এবং কঠোর পরিশ্রমই সাফল্যের মূল
কথা।জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, সন্তানদের ভবিষ্যৎ আর্থিক অবস্থার বিষয়ে
সবচেয়ে বেশি আশাবাদী এশিয়ার মানুষ। এ মহাদেশের ৫৮ শতাংশ মানুষই মনে করেন,
তাঁদের সন্তানেরা আর্থিকভাবে পিতা-মাতার চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে থাকবে।
এর মধ্যে ভিয়েতনামের ৯৫ শতাংশ, চীনের ৮৫ শতাংশ, বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ ও
ভারতের ৬৭ শতাংশ মানুষ এটা বিশ্বাস করেন। সেখানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ৬৫
শতাংশ মানুষই মনে করছেন, তাঁদের সন্তানের আর্থিক অবস্থা পিতা-মাতার চেয়ে
অনেক বেশি খারাপ হবে।
অংশগ্রহণকারীদের কাছে সুনির্দিষ্ট প্রশ্ন ছিল:
উন্নত জীবনের খোঁজে দেশে অবস্থান, নাকি বিদেশে চলে যাওয়া—সন্তানের জন্য
কোনটি সুপারিশ করবেন? তাতে ৭১ শতাংশ বাংলাদেশিই উন্নত জীবনের জন্য দেশে
অবস্থানের কথা সন্তানদের বলবেন বলে জানান। মাত্র ২৬ শতাংশ বিদেশে চলে
যাওয়ার কথা বলেছেন।
বাংলাদেশের বিভাগীয় শহরে বসবাসকারী বিভিন্ন
শ্রেণি-পেশার প্রাপ্তবয়স্ক এক হাজার বাংলাদেশি এ জরিপে অংশ নেন। চলতি
বছরের ১৪ এপ্রিল থেকে ১১ মে বাংলাদেশে এ জরিপ চালানো হয়। পিউ রিসার্চ
জানিয়েছে, ১৭ মার্চ থেকে ৫ জুন পর্যন্ত বিশ্বের মোট ৪৪টি দেশের
প্রাপ্তবয়স্ক ৪৮ হাজার ৬৪৩ জনের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে জরিপের ফলাফল তৈরি
করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আরও ছিল ভারত, পাকিস্তান, রাশিয়া,
জাপান, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভেনেজুয়েলা, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো
দেশের মানুষ।
জরিপে অংশগ্রহণকারীরা শিক্ষা ও কঠোর পরিশ্রমকে সাফল্যের
পেছনে বড় নিয়ামক হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ৬০ শতাংশ সাফল্যের জন্য শিক্ষা
এবং ৫০ শতাংশ বলেছেন কঠোর পরিশ্রমের কথা। আর ধনী-গরিবের মধ্যকার
আয়বৈষম্যকে বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এ দুই ক্ষেত্রে জরিপে
অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশিদের মধ্যে ৫০ শতাংশ শিক্ষার গুরুত্বের বিষয়ে একমত।
আর কঠোর পরিশ্রমের বিষয়ে একমত হয়েছেন ২৬ শতাংশ বাংলাদেশি।
এ ছাড়া
জীবনকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সঠিক লোক বাছাইয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন
বিশ্বের ৩৭ শতাংশ মানুষ। সাফল্যের জন্য ভাগ্যে বিশ্বাসী ৩৩ শতাংশ। অন্যদিকে
২০ শতাংশ মনে করেন, সাফল্যের জন্য সম্পদশালী পরিবারের সদস্য হতে হবে। ১৭
শতাংশ মনে করেন, পুরুষ হিসেবে জন্ম নেওয়াটাও জরুরি। আর ৫ শতাংশ মনে করেন,
জীবনকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে ঘুষ দিতে হবে।
এই যখন বিশ্ব জনমত, তখন
বাংলাদেশিদের মতামত কী? জরিপে অংশ নেওয়া ১৬ শতাংশ বাংলাদেশি জীবনে এগিয়ে
যাওয়ার পথে সঠিক লোক বাছাইকে গুরুত্ব দিয়েছেন। ভাগ্যে বিশ্বাসী ২০ শতাংশ,
১০ শতাংশ একমত পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার বিষয়ে। ৯ শতাংশ বলেছেন,
সম্পদশালী পরিবারের সদস্য হওয়ার কথা আর ৩ শতাংশ মনে করেন, ঘুষ দিয়েও
জীবনকে সামনে এগিয়ে নেওয়া যায়।
জরিপে উন্নত, উন্নয়নশীল ও
উদীয়মান—এ তিন অর্থনীতির দেশগুলোর ৬০ শতাংশ মানুষই ধনী-গরিবের বৈষম্যকে
সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশে এ
ব্যবধান ৬০ শতাংশ। আর উন্নত রাষ্ট্রে তা ৫৬ শতাংশ। কর্মসংস্থানের অভাব ও
মূল্যস্ফীতিকে এর প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন উদীয়মান ও উন্নয়নশীল
দেশগুলোর মানুষ।
ধনী-গরিবের বৈষম্যের জন্য সরকারের অর্থনৈতিক নীতিকে
দায়ী করেছেন ২৯ শতাংশ বাংলাদেশি। এ ছাড়া শ্রমিকের কম মজুরিকে ২৭ শতাংশ,
শিক্ষাব্যবস্থাকে ২০ শতাংশ এবং আন্তবাণিজ্যকে ১৪ শতাংশ মানুষ ধনী-গরিবের
বৈষম্যের জন্য দায়ী করেছেন।
ধনী-গরিবের বৈষম্য কমাতে কোনটি বেশি
কার্যকর ভূমিকা রাখবে—এ প্রশ্নে ৪১ শতাংশ বাংলাদেশি বলেছেন, উচ্চ কর হার এ
সমস্যার সমাধান করতে পারে। আর ৪০ শতাংশ মনে করেন, নিম্ন কর হার এ সমস্যার
সমাধান। এ ছাড়া ৮০ শতাংশ মনে করেন, মুক্ত বাণিজ্যব্যবস্থা এ অসমতা দূর
করতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
পিউ রিসার্চের ‘বিশ্ব মনোভাব’ জরিপ ৭১% বাংলাদেশি মা–বাবার মেত, তাঁদের তুলনায় সন্তানের আর্থিক অবস্থা ভালো হবে
৬৫% মার্কিনের মতে, সন্তানের আর্থিক অবস্থা মা–বাবার তুলনায় খারাপ হবে
৫০% বাংলাদেশির মতে, শিক্ষার মাধ্যমে সাফল্য মিলবে
৩৯% নাইজেরিয়ান মনে করেন, পুরুষ হয়ে জন্মালে সাফল্য মেলে
২৪% তিউনেসীয় মনে করেন, সাফল্য মেলে ঘুষ দিয়েও