Tuesday, September 24, 2013

অ্যাপল জিনিয়াস

চলতি বছরের গত ২৪ ফেব্রুয়ারী ছিলো স্টিভ জবসের ৫৮ তম জন্মদিন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, তাঁর মৃত্যুর প্রায় তিন বছরের মধ্যেই আমরা তাকে ভুলতে বসেছি। এর কারণ, আমাদের দেশীয় কোন মিডিয়ায় তাঁর জন্মদিনের খবরটি প্রকাশ পায়নি। তাই প্রযুক্তির রাজকুমার স্টিভ জবসকে নিয়েই আমাদের আজকের আয়োজন।
Steve Jobs
জন্ম ও শৈশবঃ
১৯৫৫ সালের ২৪শে ফেব্রুয়ারিতে সানফ্রান্সিসকোতে স্টিভ জবস জন্মগ্রহণ করেছিলেন।  তাঁর  আসল পিতা-মাতা ছিলেন ক্যাসিনো মালিক  আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালি কলেজ স্নাতক জোয়ানে সিম্পসন সেইবেল। তখন এ যুগল তরুণ বয়সের এবং অবিবাহিত ছিলেন বলে জন্মের পরপরই জবসকে নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের পল এবং ক্ল্যারা  জবসের কাছে দত্তক দেয়া হয়েছিল। স্টিভ জবসের দত্তক বাবা ছিলেন একজন লেজার কম্পানীর মেকানিক এবং মা ছিলেন একজন হিসাব রক্ষক। আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালি সিরিয়ান হওয়ার কারণে জোয়ানের বাবা, আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালি এবং জোয়ানে সিম্পসনের বিয়েতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। জন এবং জোয়ানে উইসকনসিনে থাকার সময় জোয়ানে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন এবং তিনি  শিশুটিকে জন্ম দেবার প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। কাউকে কোন কিছু না জানিয়েই জোয়ানে বাচ্চাকে জন্ম দিতে একদিন সানফ্রান্সিসকো চলে যান।  কবে শিশুটির জন্ম হয়েছিল সেটাও আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালি জানতেন না। স্টিভকে দত্তক দেয়ার কয়েক মাস পরে জোয়ানের বাবা মারা যান এবং জনের সঙ্গে জোয়ানের বিয়ে হয়। এরপর এ দম্পতি মোনা সিম্পসন নামের একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেয়। কিন্তু সিরিয়াতে একটি পরিশোধনাগারে দায়িত্ব পালন করার সময় আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালি এবং জোয়ানে সিম্পসনের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। এর ফলে মোনাও জনের থেকে দূরে থেকে মানুষ হয়েছেন। প্রসঙ্গত স্টিভ জবসের সাথে তার জন্মদাতা বাবা আব্দুল ফাত্তাহ জন জানডালির কখনো দেখা হয়নি। আজ থেকে মাত্র পাঁচ বছর আগে জন জানতে পারেন তার ছেলে (স্টিভ জবস) বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী এবং অ্যাপলের মতো টেক জায়ান্টের সিইও।  অ্যাপল জিনিয়াস স্টিভ জবসকে এক নজর দেখার জন্য তীর্থের কাকের মতো প্রতীক্ষায় ছিলেন তার জন্মদাতা পিতা জন জানডালি।

কলেজ থেকে ঝরে পড়াঃ  স্টিভ জবস বেড়ে উঠেন সিলিকন ভ্যালিতে যেটি পরবর্তীতে তথ্যপ্রযুক্তির তীর্থস্থান হয়ে ওঠে। ক্যালিফোর্নিয়ার এই স্থানটিতে এক সময় ইলেকট্রনিক বর্জ্য ফেলা হতো। ১৯৬৯ সালের দিকে স্টিফেন উজনিয়াক নামের পাঁচ বছরের বড় এক তরুণের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় স্টিভ জবসের এবং দুজনেরই ছিল  ইলেকট্রোনিক্সের প্রতি গভীর আগ্রহ। স্টিভ উজনিয়াকের সহযোগিতায়  হোমব্রু কম্পিউটার ক্লাব থেকে স্টিভ জবস বেশ কিছু প্রোগ্রামিং ও হার্ডওয়্যারের কাজ শিখে নেন। হাইস্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময়ই তিনি সফটওয়্যার সংস্থা হিউলেট-প্যাকার্ড বা এইচপিতে কাজ করার সুযোগ পেয়ে যান। ১৯৭২ সালে স্কুলজীবনের গণ্ডি পেরিয়েই দত্তক বাবা-মায়ের কাছে তাকে  রিড কলেজে ভর্তি করানোর বায়না ধরেন। কষ্টসাধ্য হলেও জন্মদাত্রী মাকে দেয়া  কথা  রক্ষা করতেই পল-ক্ল্যারা দম্পতি রিড কলেজেই ভর্তি করান জবসকে। কিন্তু কলেজের ধরাবাঁধা নিয়ম তাঁর ভালো না লাগায় মাত্র ছয় মাসের ব্যবধানে প্রথম সেমিস্টারেই খারাপ ফল করার কারণে কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হন জবস, ঝরে পড়েন কলেজ থেকে।  মূলত এরপর থেকেই তাঁর কর্মজীবনের সূত্রপাত ঘটে।

অ্যাপলের পথচলাঃ  ছোট বেলা থেকেই জবসের মধ্যে একটি ব্যবসায়ীসুলভ মনোভাব ছিল। কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর তিনি আবার সিলিকন ভ্যালিতে ফিরে আসেন। দুই বন্ধু মিলে প্রথমে যে জিনিসটি তৈরী করেন সেটা হলো একটা ব্লু বক্স। এর মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন স্থানে বিনামূল্যে কথা বলা যেত। ব্লু বক্স বিক্রি করে তাঁরা ৬ হাজার ডলারের মতো সংগ্রহ করেন। এরপর স্টিফেন উজনিয়াকের সাথে কম্পিউটার বোর্ড বানানোর পরিকল্পনা করেন। কথা মতই তৈরি করলেন একটি সার্কিট বোর্ড। পরিকল্পনা হলো সেটি বিক্রি করার মূলত সেদিন থেকেই অ্যাপল কম্পিউটারের সূচনা। প্রতি সার্কিট বোর্ডের জন্য জবস ১০০ ডলার করে বিক্রি করার প্রস্তাব পান।  কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭৭ সালে বন্ধু স্টিভ উজনিয়াকের সহযোগিতায় অ্যাপল-২ নামের একটি উন্নত কম্পিউটার বানাতে তাঁরা সক্ষম হন। যোদিও এর এক বছর আগে তাঁরা অ্যাপল-১ নামে প্রকৌশলীদের উপযুক্ত করে একটি কম্পিউটার বানান। কিন্তু এটি অনেকের অগোচরেই থেকে যায়। এক সময় বাণিজ্যিক সহযোগিতার জন্য প্রসেসর নির্মাতা ইন্টেল করপোরেশনের সাবেক এক কর্মকর্তার  সাথে তাঁদের পরিচয় হয়। সহযোগিতা হিসেবে তাঁরা উনার কাছ থেকে আড়াই লাখ ডলার পান। মাত্র দুই বছরের মধ্যে অ্যাপল-২ সবার সুনজরে চলে আসে। এবং ১৯৮০ সালে স্টিভ জবসের সম্পদের পরিমাণ ২০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। অবশেষে নানা অনুকূল ও প্রতিকূলতার মাধ্যমে নিজের উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির মাধ্যমে প্রযুক্তিগত কম্পানী হিসেবে অ্যাপলকে সবার শির্ষে নিয়ে যান স্টিভ জবস। যেখানে গত বছরের হিসেব মতে জবসের মোট সম্পত্তির পরিমাণ ছিল ৮৩০ কোটি ডলার।

ব্যাক্তিগত জীবনে স্টিভ জবসঃ নিজের জন্মদাতা বাবা-মায়ের মতো স্টিভ জবসও নিজের ও প্রেমিকার সম্পর্ককেও লোকচক্ষুর আড়ালে রেখেছিলেন। অ্যাপল-২ প্রকাশ করার সময়ই মাত্র ২৩ বছর বয়সে তিনি লিসা নিকোল নামে একটি কন্যা সন্তানের জনক হন। কিন্তু তিনি এসময় প্রেমিকা ক্রিশ অ্যান ব্রেনানের গর্ভজাত কন্যা সন্তান লিসা নিকোলকে নিজের মেয়ে হিসেবে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন এবং নিজের মেয়ের প্রতি তাঁর স্নেহের প্রমাণ সরূপ  ১৯৮৩ সালে তিনি মেয়ের নামে (লিসা, ১৯৮৩ সাল) একটি উন্নত কম্পিউটার উদ্ভাবন করেন।  এই কম্পিউটারেই সর্বপ্রথম আইকন, গ্রাফিক্যাল ইউজার ইন্টাফেস, মাউস কার্সার ব্যাবহার করা হয়। তিনি তাঁর মেয়ে লিসা নিকোলের হার্ভাডে পড়াশুনার ব্যবস্থা করে দেন । লিসা নিকোল ২০০০ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বর্তমানে একটি ম্যাগাজিনে লেখিকা হিসেবে নিযুক্ত আছেন। উল্লেখ্য থাকে যে, স্টিভ জবস ও ক্রিশ অ্যান ব্রেনান কখনো বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হননি।  নিজের বোন মোনা সিম্পসনের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানতেন না। কিন্তু ১৯৮৫ সালে মনা একজন খ্যাতিমান লেখিকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। সে সময় মোনা সিম্পসনের, মা ও মেয়েকে নিয়ে লেখা “Anywhere But Hereচরম জনপ্রিয়তা অর্জন করে। সে সময়-ই স্টিভ জবস নিজ বোনের খোঁজ পান। বোন মোনা সিম্পসন তার বইটি ভাই স্টিভ জবসকে উৎসর্গ করেন। তখন থেকেই তারা খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নিউইয়র্ক টাইমস-কে দেয়া এক সাক্ষাতকারে স্টিভ জবস তাঁর বোন মোনা সিম্পসন সম্পর্কে বলেন- “আমরা আসলে একই পরিবারের। সে আমার পৃথিবীর ভালো বন্ধুদের মধ্যে অন্যতম। প্রতি দুই-এক দিন পরপর ওর সাথে আমার কথা হয়।” । স্টিভ তার বোনকে ঠিকই খুঁজে নিয়েছিলেন। ৫৪ বছর বয়সী মোনার সঙ্গে  এবং জন্মদাত্রি মায়ের সঙ্গেও তার ভাল সম্পর্ক ছিল। ব্যাক্তিগত জীবনে স্টিভ জবস ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী। ষ্টিভ জবস পশু শিকারে বিশ্বাস করতেন না এবং তিনি নিরামিষ খাবার খেতেন। ১৯৯১ সালে তিনি লরেন পাওয়েল নামের একজনকে বিয়ে করেন। সেখানে তিনি এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক হন।

অন্যরকম জবসঃ বাস্তব জীবনে স্টিভ জবস ছিলেন উদ্বাস্তু ধরণের মানুষ। ২০০৫ সালে ষ্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানের তিনি বলেছিলেন, “আমার ডর্মরুম ছিল না। তাই আমি বন্ধুদের রুমের মেঝেতে ঘুমাতাম। আমি কোকের বোতল যোগাঢ় করতাম যা ফেরত দিলে ৫ সেন্টস করে পাওয়া যেতো। এটি দিয়ে আমি খাবার কিনতাম। আর সপ্তাহে একবার ভালো খাবারের জন্য প্রতি রবিবার আমি সাত মাইল হেটে শহরের আরেক প্রান্তে হরে কৃষ্ণ মন্দিরে যেতাম”। একসময় তিনি এলএসডি ড্রাগ নিতেন। একটি বইয়ের জন্য দেয়া সাক্ষাতকারে তিনি বলেন- “আমি জীবনে যে দুই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস করেছি, এটা হলো তাদের একটি”। স্টিভ জবসের সাথে বিভিন্ন সেলিব্রেটিরও অন্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠে। দ্বিতীয়বারে অ্যাপলে স্টিভ জবসের প্রত্যাবর্তনের উপর প্রকাশিত  The Second Coming of Steve Jobs” বায়োগ্রাফী অনুযায়ী- “ষ্টিভ তার বয়সের দ্বিতীয় দশকে ফোক গায়িকা জোয়ান বায়েসের সাথে খুব অন্তরঙ্গ সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন। এমনকি স্টিভ জবসের প্রিয় সংগীত শিল্পী ছিলেন বব ডিলান”। বায়োগ্রাফীটিতে অভিনেত্রী ডিয়ান কিটনের সাথেও স্টিভ জবসের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নিয়ে বলে হয়েছে। ২০০৭ সালের দিকে স্টিভ জবসের এসএল-৫৫ মডেলের একটি মার্সিডিস বেঞ্চ  গাড়ি ছিল। তিনি সেই গাড়িটি কয়েক বছর কোন রকম লাইসেন্স প্লেট ছাড়াই চালাতেন।
বিশ্ববিখ্যাত কম্পিউটার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান অ্যাপলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রধান নির্বাহী অ্যাপল জিনিয়াস স্টিভ জবস আর নেই। মি. জবস দীর্ঘদিন ধরে অগ্ন্যাশয়ের জটিল ক্যানসারে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৬ বছর। ইলেকট্রনিক বর্জ্য ফেলার সেই জায়গাটি থেকে নিজের হাতের আধখাওয়া আপেল থেকে নিজের স্বপ্নকে সত্যি করেন মহাকালের এই সফল ব্যাক্তিত্ত্ব স্টিভ জবস। নিজের কর্মঠ চিন্তাশক্তির বদৌলতে প্রযুক্তি বিশ্বকে উপহার  দিয়েছেন নিত্য নতুন সব চোখ ধাঁধানো প্রযুক্তি পণ্য। নিঃসন্দেহে তাঁর অভাব প্রযুক্তি দুনিয়াকে দীর্ঘদিন ভোগাবে। তাঁর আত্মার প্রতি আমাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
 (তথ্য সূত্র: ফক্স নিউজ, ইয়াহু অনলাইন)

Related Posts:

  • 1 / Prayer of the prostrate is the rapid flow of blood to the brain. It also increases the power of our memories.I / prayers when we stand  jayanamajera our eyes fixed position at the center of the front is just a res… Read More
  • নামাজের উপকারিতা   নামাজের অবিশ্বাস্য ১১ টি উপকারিতাঃ           ১/ নামাজে যখন সিজদা করা হয় তখন আমাদের মস্তিস্কে রক্ত দ্রুত প্রবাহিত হয়। ফলে আমাদের স্মৃতি শক্তি অনেকবৃদ্ধি পায়। ২/ নামাজের যখন আমরা দ… Read More
  • The most simple way to create your bootable pen-drive We offer the Windows installation CD. It can take quite a while. But we boot the pen drive with a Windows install of Windows installed, you can at least give it more. You'll have your pen-drive first boo table. That is why y… Read More
  • তোকে নিয়ে… এলোমেলো নিঃসঙ্গতার সাথে সখ্য গড়েছিলাম ভালোই, তারপর… চোখে মোটা গ্লাসের চশমা রুক্ষ চুলের লুকোচুরি আর তার বন্য হাসির উচ্ছলতা, ভেবেছিলাম তোকে নিয়ে লিখবো কবিতা, এলোমেলো বন্য কবিতা। আগুনঝরা ফাগুনে ঝাপসা চোখে বাসন্তি শাড়ি জ… Read More
  • When you create a blog just like you for it, as well as a Facebook page open. So open the pages you post on your blog, but do not have time to post on your Facebook Page Chrome. So today I'll show you how to auto post your b… Read More

0 comments:

Marque slider

আপনাকে FreeTalk এ স্বাগতম Thank you for come Here

FreeTalk. Powered by Blogger.

Popular Posts

Blog Archive