সাধারণত ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করে থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউট (আইবিএ), ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদ, অর্থনীতি বিভাগ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)। পরীক্ষার সময় এক থেকে তিন ঘণ্টা পর্যন্ত হতে পারে। কোনো কোনো ব্যাংকের প্রশ্ন চার-পাঁচটি বিষয়েই থাকে। আবার কোনো কোনো ব্যাংকে তিনটি বিষয় থেকে প্রশ্ন হয়। প্রস্তুতি নেওয়ার সময় সব বিষয়ই জানা থাকতে হবে। প্রস্তুতি ভালো থাকলে প্রশ্ন যেমন-ই হোক, ভালো করা যায়।
পরীক্ষা পদ্ধতি
ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষাগুলোতে এক ব্যাংক থেকে অন্য ব্যাংকে কিছুটা ভিন্নতা থাকলেও প্রশ্নের ধরন সাধারণত একই ধরনের হয়ে থাকে। নিয়োগ পরীক্ষায় সাধারণত ১০০ নম্বরের প্রশ্ন হয়। প্রায় সব ব্যাংকেই এমসিকিউ পরীক্ষার পর লিখিত পরীক্ষা হয়।
এমসিকিউ অংশের প্রশ্ন হয় বাংলা, ইংরেজি, গণিত, সাধারণ জ্ঞান, দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার, অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, পাজলস এবং ডাটা সাফিশিয়েন্সি অংশ থেকে। আর লিখিত বা বর্ণনামূলক পরীক্ষায় প্রশ্ন থাকে গণিত, ইংরেজি ও অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি অংশ থেকে। তবে বিভিন্ন ইসলামী ব্যাংকের প্রশ্ন একটু ব্যতিক্রম হয়ে থাকে। এ বিষয়গুলো ছাড়াও ইসলামী সংস্কৃতি ও অর্থব্যবস্থার ওপর বেশ কিছু প্রশ্ন থাকে। সরকারি এবং ইসলামী ব্যাংক ছাড়া অন্য ব্যাংকগুলোর প্রশ্ন করা হয় সাধারণত ইংরেজিতে। পরীক্ষার সময় এবং নম্বর বণ্টনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ব্যাংকের মধ্যে ভিন্নতা দেখা যায়।
বাংলা
বাংলাবিষয়ক প্রশ্নগুলো করা হয় সাধারণত ব্যাকরণ এবং সাহিত্য থেকে। ব্যাকরণের ভাষা, বর্ণ, শব্দ, বাক্য, সন্ধি-বিচ্ছেদ, লিঙ্গান্তর, বচন, বানান শুদ্ধি, কারক ও বিভক্তি, সমাস, পদ, প্রকৃতি-প্রত্যয়, বাগধারা, এককথায় প্রকাশ, অনুবাদ, অর্থনীতিবিষয়ক প্রবন্ধ প্রভৃতি থেকে প্রশ্ন হয়ে থাকে। এ ছাড়া বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উৎপত্তি এবং বিকাশ, বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী ও কর্ম, সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য ঘটনা, চরিত্র ও উক্তি, বিখ্যাত পত্রপত্রিকার সম্পাদক প্রভৃতি বিষয়েও
প্রশ্ন করা হয়।
ইংরেজি
চাকরিপ্রার্থীরা নিয়োগ পরীক্ষায় ইংরেজিতে বেশি ভুল করেন বলে এ বিষয়ে বিশেষ প্রস্তুতি থাকতে হবে। বিশেষ করে letter, word, sentence, parts of speech, voice, narration, phrase and idioms, correction, tense, number, gender, person, completing sentence, correct spelling, synoûm, antoûm প্রভৃতি ভালোভাবে শিখতে হবে। এ ছাড়া বিখ্যাত সাহিত্যকর্ম ও রচয়িতা, কবি-সাহিত্যিকদের জীবনী ও সৃষ্টিকর্ম, বিভিন্ন কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটকের চরিত্র ও বিশেষ উক্তিগুলো সম্পর্কেও ধারণা রাখতে হবে।
গণিত
নিয়োগ পরীক্ষাগুলোতে অনেকেরই গণিতভীতি কাজ করে। এই ভয় কাটানোর সবচেয়ে ভালো উপায় নিয়মিত অনুশীলন। ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষায় গণিত অংশে ভালো করতে গড়, গতি, অনুপাত, শতকরা, পরিমাপ ও একক, সুদকষা, লাভ-ক্ষতি এবং পরিমিতির জটিল সমস্যাগুলোর সমাধান ভালোভাবে শিখতে হবে। পাশাপাশি লসাগু-গসাগু, ঐকিক নিয়ম, বর্গ, সরল, মান নির্ণয়, সাধারণ চার নিয়ম, সামান্তধারা নির্ণয়, সমাধান এবং জ্যামিতিক সূত্র ও সংজ্ঞাগুলো শিখতে হবে।
সাধারণ জ্ঞান
সাধারণ জ্ঞান অংশে প্রশ্ন করা হয় বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়ে। বাংলাদেশবিষয়ক প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে ভৌগোলিক বিষয়াবলি, আয়তন, সীমানা, নদ-নদী, কৃষিজ, বনজ, প্রাণিজ ও খনিজ সম্পদ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ, শিল্প ও বাণিজ্য, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান, পুরস্কার ও সম্মাননা, অর্থনৈতিকব্যবস্থা, নৃতাত্তি্বক পরিচয় এবং সাম্প্রতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি জানতে হবে। এ ছাড়া সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি, বিশ্ব রাজনীতি, মহাদেশ, দেশ ও জাতি, সীমারেখা ও স্থান, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সংগঠন, চুক্তি ও সনদ, পুরস্কার ও সম্মাননা, বিশ্ব অর্থনীতি, শিল্প ও বাণিজ্য, খেলাধুলা, বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব, বিখ্যাত স্থান ও স্থাপনা বিষয়ে জ্ঞান রাখতে হবে।
দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার
ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষায় বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয় দৈনন্দিন বিজ্ঞান ও কম্পিউটার বিষয়ে। প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কার ও আবিষ্কারক, দৈনন্দিন বিজ্ঞান, তাপ, আলো, বিদ্যুৎ, শব্দ, চুম্বক, মানবদেহ, উদ্ভিদ ও প্রাণিবিদ্যা, খাদ্য ও পুষ্টি, চিকিৎসাবিজ্ঞান, মহাকাশবিজ্ঞান, পরিবেশবিজ্ঞান, ভূগোল, প্রাকৃতিক ভূগোল, খনিজ ও মৃত্তিকা, বায়ুমণ্ডল, যন্ত্রবিদ্যা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিঙ্ এবং কম্পিউটার সম্পর্কিত তথ্যগুলো জানা থাকতে হবে।
অ্যানালিটিক্যাল অ্যাবিলিটি, পাজলস, ডাটা সাফিশিয়েন্সি
ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর বুদ্ধিমত্তা, বিশ্লেষণী ক্ষমতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়। নিজের বুদ্ধিমত্তা ও বিশ্লেষণী ক্ষমতা প্রয়োগ করে বিষয়গুলোর উত্তর করতে হবে। বিষয়টি বেশ কঠিন। তবে অফিসিয়াল জিম্যাট, ব্যারনস জিম্যাট কিংবা আইকিউ টেস্টের যেকোনো বই দেখে নিয়মিত চর্চা করলে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া সহজ হয় যেকোনো পরীক্ষার্থীর জন্য।
ইসলামিক জ্ঞান
ইসলামি শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর নিয়োগ পরীক্ষায় প্রায় ২৫-৩০ নম্বরের প্রশ্ন করা হয় ইসলামি জ্ঞানবিষয়ক। সে ক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়াহ্ভিত্তিক ব্যাংকে যাঁরা চাকরি করতে চান তাঁদের অন্যান্য বিষয়গুলোর সঙ্গে ইসলামিক জ্ঞানও রাখতে হবে। বিশেষ করে আকাইদ, শরীয়ত, আখলাক, পবিত্রতা, নবী-রাসুল এবং সাহাবীদের জীবনী, ইসলামী সমাজব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয়ব্যবস্থা, ইসলামী অর্থব্যবস্থা, ইসলামী গ্রন্থ ও গ্রন্থকার, কোরআন ও হাদিস, মুসলিম কবি, দার্শনিক ও বিজ্ঞানীদের জীবনী ও কর্ম, জিহাদ, আন্দোলন ও সংগঠন প্রভৃতি সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে।
সহায়ক বই
ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষায় ভালো করতে অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর পাঠ্য বইগুলো নিয়মিত পড়তে হবে। দৈনিক জাতীয় পত্রিকাগুলোর পাশাপাশি টাইমস, রিডার্স ডাইজেস্ট, ইকোনমিকসের মতো আন্তর্জাতিক পত্রিকাগুলো নিয়মিত পড়তে হবে। পাশাপাশি সাম্প্রতিক নিউজভিত্তিক মাসিক পত্রিকা যেমন_কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট নিউজ প্রভৃতি পড়তে হবে। এ ছাড়া বিগত বছরের ব্যাংকার্স রিক্রুটমেন্ট পরীক্ষার প্রশ্নপত্র-সংবলিত বেশ কিছু বই কিনতে পাওয়া যায়। এগুলো নিয়মিত চর্চা করলে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া বেশ সহজ হবে
0 comments:
Post a Comment